বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৩

বিশ্বসেরা সেরা কালো টুপি হ্যাকারদের গল্প


হ্যাক!!! যারা ইন্টারনেট এর সাথে যত সামান্য পরিচিত তাদের নামটা শুনলেই কেমন যেন শরীর হিম হয়ে আসে আর যারা হ্যাকিং এর কবলে পড়েছেন তাদের তো আর কথাই নাই ।হ্যাকার নাম শুনলেই প্রথমেই যে জিনিসটা আমার চোখের সামনে ভেসে আসে তা হল নিজের সাইটে একটা কালো ডিফেস পেজ।যদিও কেবল ওয়েবসাইট হ্যাক করাই হ্যাকারের কাজ না। আরও অনেক কাজ আছে।হ্যাকারা যে সব সময় খারাপ হবে এমনটা নয়।হ্যাকারদের ও অনেক শ্রেণী বিভাগ আছে । এবার আসুন জেনে ফেলি হ্যাকারদের কিছু তথ্য।
হ্যাকার কে?:
হ্যাকার হচ্ছেন তারাই যারা/যিনি নিরাপত্তা/অনিরাপত্তা সাথে জড়িত এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা এর দুর্বল দিক খুজে বের করায় বিশেষ ভাবে দক্ষ অথবা অন্য কম্পিউটার ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম বা জ্ঞানের অধিকারী ।
হ্যাকার শব্দটি সাধারণত কালো-টুপি হ্যাকারদের অর্থেই সবচেয়ে বেশী ব্যবহিত হয় যারা মূলত ধংসাত্বক ও অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত থাকেন। তবে যে সবাই অপরাধ করার জন্য হ্যাকার হন তা নয়,বেশ কিছু নৈতিক হ্যাকারও আছেন যাদের সাদা টুপির হ্যাকার বা একাডেমীকালি ক্রাকার বলা হয়ে থাকে ।আমি পড়ে হ্যাকারের শ্রেণী বিভাগ নিয়ে আলোচনা করব ।
তাহলে হ্যাকিংটা কি?
হ্যাকিং একটি প্রক্রিয়া যেখানে কেউ কোন বৈধ অনুমতি ছাড়া কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে।

হ্যাকারের প্রকারভেদঃ
হ্যাকারদের চিহ্নিত করা হয় Hat বা টুপি দিয়ে।হ্যাকারদের প্রধানত ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকলেও হ্যাকারদের কে মোট ৭ টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় ।
  • White Hat Hacker
  • Black Hat hacker
  • Grey Hat Hacker
  • Script Kidie
  • Neophyte or nOOb
  • Blue Hat Hacker
  • Hacktivist
এবার আসা যাক এসব হ্যাকারদের কাজের বর্ণনায়ঃ
ডস এট্যাকের সাথে জড়িত।
যাই হোক এবার আসা যাক মূল আলোচনায় ,

 আমি এখন এমন কয়েকজন ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারের গল্প আপনাদের শোনাব যাদের সারা পৃথিবীর সাইবার নিরাপত্তা কর্মীরা বেশ ভালো ভাবেই চেনেন এবং তাদের মেধাকে বেশ ভয়ের চোখেই দেখেন । মন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন হ্যাকিং একটা নেশা যারা এই কাজে পারদর্শী তারা খুব তাড়াতাড়িই এর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন । এসন কালো টুপি হ্যাকাররেরা বহুবার তাদের অপরাধের জন্য জেলে গেলেও তাদের লেজ কখনই সোজা হয় নি বরং তারা ফিরে এসেছে আরো ভয়ংকর রুপে। তাহলে আর দেরী কেন চলে আসুন বিশ্বের সেরা কালো টূপি হ্যকারদের প্রোফাইলে।
Gary McKinnon:
পৃথিবীর সেরা হ্যাকারদের মধ্যে যার নাম প্রথমেই মনে আসে তিনি Solo হিসেবে পরিচিত। জন্ম ১০ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬ সালে স্কটল্যান্ডে , বর্তমানে ইংল্যান্ডের নাগরিক । স্কটিশ কন্সপিরেসির এই থিয়োরিস্ট U.S এর এয়ার ফোর্স, আর্মি, ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, নাসা, নেভির মত বড় বড় নেটওয়ার্কে অবৈধভাবে প্রবেশ করে বিশ্বরেকর্ড করেন।২০০৬ সালে গ্লোবাল এনার্জি ক্রাইসিস সমাধানের নিমিত্তে এগুলো থেকে তিনি এলিয়েন স্পেসক্র্যাফট এর যাবতীয় প্রমাণাদি চুরি নষ্ট করেন যা ইউএস আদালতের ভাষ্যমতে প্রায় $৭০০০,০০০ ক্ষতির সমতুল্য। ২০০২ সালে ইউ এস আর্মির সার্ভার স্ক্রিনে “Your security system is crap,” it read. “I am Solo. I will continue to disrupt at the highest levels.” এই ম্যাসেজ দেখা দিয়েছিল যা তিনিই করেছিলেন। Large scale hackings এর সূচনা করার মধ্যে দিয়ে তিনি ইউ এস আর্মির সার্ভার হামলা করেন। হামলার কারণ হিসাবে উল্লেখ করতে তিনি বলেন, “ আমার বিশ্বাস ছিল তারা এমন কিছু তথ্য সেখানে লুকিয়ে রেখেছিল যা সকলের জানা দরকার।“ ২০০২ সালে তিনবার পুলিশি কেসে ধরা খাবার পর ২০০২ সালে নভেম্বর মাসে ভার্জিনিয়া থেকে ৭টি সাইবার অপরাধের জন্য তাকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়।
Gary McKinnon
Kevin Mitnick:
বিশ্বের সুপরিচিত ভয়ংকর হ্যাকারদের মধ্যে মিটনিক একজন যিনি আখ্যায়িত হয়েছেন The most wanted computer criminals in United States এবং The most dangerous hacker in the World হিসেবে।জন্ম ১৯৬৩ সালে আমেরিকাতে । মাত্র ১২ বছর বয়সেই তার হ্যাকিং এর হতে খড়ি । ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত তিনি হ্যাকিং এর জন্য বহুবার জেলে গিয়েছেন তবে ভদ্রলোক শেষমেষ থেমেছেন,এখন কম্পিউটার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ হয়ে ও লেখালেখি নিয়ে ব্যাস্ত আছেন।এক্ সময় তিনি  টাচ টোন এবং ভয়েস কন্ট্রোলের মাধ্যমে সেলফোন ব্যবহার করে মিটনিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর আক্সেস নিতেন। মটোরোলার মত বৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এই জিনিয়াসের দ্বারা হ্যাকড হয়েছিল যা তাকে সেই দিনগুলিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছিল
Kevin Mitnick
Jonathan James:
এবার যার কথা বলব তার কাহিনী শুনে আপনারও হ্যাকার হতে ইচ্ছে করবে।১৬ বছর বয়সের আমেরিকান এই কিশোর হ্যাকিংকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করেছিলেন যা তাকে ১৬ বারেরও বেশি কারাগারে নিয়ে গিয়েছিল। ইউএস ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট তার এই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছিল। ইউ এস ডিফেন্স সার্ভার থেকে তিনি প্রায় তিন হাজার অতিগোপন বার্তা অনেক ব্যবহারকারীর পার্সওয়ার্ড চুরি করেছিলেন। . মিলিয়ন ডলারের নাসা সফটওয়্যার চুরি করে নাসার সার্ভার সিস্টেমকে শাটডাউন করতে বাধ্য করেছিলেন তিনি। চিন্তা করতে পারেন নাসার সিস্টেম শাটডাউ! সাইবারস্পেসে তার এই অস্বাভাবিক ব্যবহার জেমসকে ১০ বছর কম্পিউটার স্পর্শ করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করেছিল!!!
Jonathan James
Adrian Lamo:
মাইক্রোসফট, ইয়াহু, সিটিগ্রুপ, ব্যাংক অব আমেরিকা, সিঙ্গুলার এবং দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এর কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্রেকডাউন করে Lamo সর্বপ্রথম বিশ্বরেকর্ড করেন। হোমলেস হ্যাকার নামে পরিচিত বিখ্যাত এই হ্যাকারকে ২০০২ সালে New York আদালতের নির্দেশে এই আচরনের কারনে ৬৫,০০০ ইউএস ডলার জরিমানা গুনতে হয়েছিলেন। ২০১০ সালে Bradley Manning কতৃক বাগদাদে বিমান আক্রমনের ভিডিও উইকিলিকস এর মাধ্যমে তিনিই প্রকাশ করেন। বর্তমানে তিনি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছেন
Adrian Lamo
George Hotz:
২০১১ সালে সনি এরিকসন এর প্লেষ্টেশন জেলব্রেক করে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তবে তার বিচার কার্য চলাকালীন সময়ে তার সহযোগীরা তার তৈরি পদ্ধতি জনসমক্ষে প্রকাশ করে যার ফলশ্রুতিতে এনিনমাস হ্যাকারগ্রুপ সনির সার্ভারে হামলা করে প্রায় ৭৭ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য চুরি করে। তবে তিনি বিষয়ে তার সম্পৃক্ততায় অস্বীকৃতি জানায়। তিনি বলেনএকটি সার্ভার আক্রমন করে শুধু ইজজার এর তথ্য চুরি করার মতো কাজ তিনি হলে করতেন না কারণ এটি মোটেও সন্তোষজনক নয় অন্তত তার জন্য
George Hotz
 David Smith:
Smith পরিচিতি লাভ করে তার Melissa নামক -মেইল ভাইরাস তৈরির মাধ্যমে।তার ভাষ্যমতে এই ভাইরাস ভিকটিম এর কোন ক্ষতি করে না তবে কোন ভিকটিম এর লিস্টে থাকা প্রায় সকল -মেইল ভাইরাস প্রেরণ করে। জন্য তাকে আমেরিকার ফেডারেল প্রিজনে রাখা হয় এবং তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যাকে ইমেইল ভাইরাস আবিষ্কারের জন্য জেলে পাঠানো হয়
David Smith
Michael Calce:
২০০০ সালে ইয়াহু, আমাজন,ডেল, ইবে,এবং সিএনএন এর নেটওয়ার্কে আক্রমন করে এই হ্যাকার আলোচনার শীর্ষে উঠে আসেন। তৎকালীন সময়ে ইয়াহু ছিল শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন। কিন্তু আর আক্রমনের কবলে ইয়াহুর সার্ভার ঘন্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য হ্যাকার এর মতো তিনি তার হ্যাকার গ্রুপ ইয়াহুর সার্ভার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হন। ২০০১ সালে Montreal Youth Court এর নির্দেশে তার আট মাসের জেল হয়
Michael Calce
Robert Tappan Morris:
১৯৮৮ সালে worm তৈরি করে Robert Morris ইন্টারনেটে থাকা এক দশমাংশ কম্পিউটার আক্রমন করেন এবং প্রায় ৬০০০ হাজার এরও অধিক কম্পিউটার তার নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করেন।মাত্র ৯৯ লাইনের কোড লিখে শত শত কম্পিউটার আক্রমণ করেন।পরবর্তিতে এই কোড মরিস ওয়ার্ম নামে পরিচিতি লাভ করে। ধরা পরার পর মরিস আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলে, সে কোন খারাপ কাজ করে নি।
কোড ছাড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেটের সাথে কতগুলো কম্পিউটার সংযুক্ত আছে তা বের করা। তবে তাকে সনাক্ত করতে পুলিশের বেশি সমস্যা হয়নি কারণ এই ভাইরাস ছাড়ার প্রায় একমাস পূর্বে তিনি চ্যাটিং এর সময় এই ভাইরাস এর ব্যাপারে আভাস দিয়েছিলেন এইটি ছিল তার ভুল। তার ভাষ্যমতে , তার ভাইরাস কতৃক আক্রান্ত কম্পিউটার এর কোন ক্ষতি হবে না। মরিস বর্তমানে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল কম্পিউটার বিজ্ঞান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইটি) বিভাগে কাজ করছেন
Robert Tappan Morris
Albert Gonzalez:
প্রথম পরিচিতি লাভ করেন ATM ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরির মাধ্যমে। তিনি বর্তমান সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী ক্রেডিট কার্ড এর তথ্য চুরি করে রেকর্ড করেন।২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সে এবং তার সহযোগীরা প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করে। . Gonzalez SQL পদ্ধতি ব্যবহার করে malware backdoors তৈরি করে বিভিন্ন কর্পোরেট সার্ভিস প্রবেশ করত এবং packet-sniffing (বিশেষত ARP Spoofing) এর মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে তথ্য চুরি করত। গ্রফতার হওয়ার সময় তার কাছ থেকে $. মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্ত করা হয়।যার মধ্যে . মিলিয়ন উদ্ধার করা হয় তার বাড়ির উঠান খুড়ে পলিথিনের ব্যাগ থেকে।২০১০ সালে তার ১০ বছরের জেল হয়
Albert Gonzalez
Kevin Poulsen:
Dark Dante(Code Name) নামে পরিচিত Kevin Poulsen আমেরিকান হ্যাকার FBI ডাটাবেজ স্টেশন ফোন লাইন্স হ্যাক করে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন। ভয়ঙ্কর এই হ্যাকার LA রেডিও স্টেশন হ্যাক করে পরিচিতি লাভ করে। পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলে তিনি আত্মগোপন করেন। তবে ১৯৯১ সালের দিকে সে FBI এর হাতে ধরা পড়ে।তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের মধ্যে কম্পিউটার কেলেঙ্কারি, অর্থ পাচার, সহ তথ্য চুরির অভিযোগ সে স্বীকার করেন। যার ফলে তার ৫১ মাসের জেল হয়। এটি পৃথিবীতে তৎকালীন সময় পর্যন্ত হ্যাকিং এর দায়ে সবচেয়ে বড়(দীর্ঘতম) শাস্তি। বর্তমানে তিনি Wired News এর সাংবাদিক সিনিয়র ইডিটর হিসেবে কর্মরত আছেন
Kevin Poulsen
এদের কাহিনী শুনে হয়ত এদের উপর আপনার ঘৃণা আসতে পারে তবে আজ সাইবারের এমন কঠোর সিকিউরিটি ব্যবস্থা এর জন্য এদের তো আপনি ধন্যবাদ দিতেই পারেন।এরা হয় তো হতে পারে সাইবার ক্রাইমের বস তবে তাদের মেধার এর পরিচয় সবাই কে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল  আর সেটার প্রসাংশা আপনাকে করতেই হবে।
বাংলাদেশেও হ্যাকার গোষ্ঠি কম নেই তবে আনন্দের কথা এটাই যে তাদের অধিকাংশই সাদা-টুপির হ্যাকার । কিছুদিন আগেই ভারতের এক বেসরকারী চ্যানেলে আমাদের দেশের খেলোয়ারদের নিয়ে রসিকতা করলে বাংলার হ্যাকারেরা সেই চ্যানেলের সাইটি হ্যাক করে শিক্ষা দেয় , যদিও এগুলো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
রেফারেন্সঃ http://techtweets.com.bd/hacking-antihacking/towfiq/39774 (দুরন্ত তৌফিক)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন